শিরোনাম
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ওষুধ তৈরি করছে বেক্সিমকো ফার্মা ও বিকন ফার্মা

করোনার ওষুধ তৈরি করছে বেক্সিমকো-বিকন

করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী কিছু ওষুধের নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। যদিও সেগুলোর পূর্ণ কার্যকারিতা এখনো প্রমাণ হয়নি। তবে কেউ বলছেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধগুলো ভালো কাজ করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এগুলোর বেশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তবে বাংলাদেশের অন্যতম ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা বলছে, সরকারের ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা একটি ছাড়া আলোচিত সব ওষুধের উপাদান এনে মজুদ করেছে এবং ওষুধও তৈরি করে ফেলেছে। যে ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ হবে এবং অথবা সরকার চাইবে সেটাই তারা উৎপাদন করে বাজারজাত করবে।

তবে বেক্সিমকো ও বিকনের বাইরেও দুই একটি কোম্পানি ওষুধগুলো তৈরি করতে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন নিয়েছে বলে জানা গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত চিকিৎসায় একটি ওষুধের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। সেটি হলো জাপানের ফুজিফিল্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল। ওষুধটির জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির। যার ব্র্যান্ড নাম অ্যাভিগান। ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য ওষুধটি উৎপাদন করে কোম্পানিটি।

ওষুধটির নাম ব্যাপক আলোচনায় আসার অন্যতম কারণ হলো- চীন করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করে বেশ ফল পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হংকংভিত্তিক গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলজি ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ঝ্যাং জিনমিন বলেন, তাদের দুটি মেডিকেল ইনস্টিটিউশন ফ্যাভিপিরাভির নিয়ে পরীক্ষা চালায়। তাতে দেখা যায়, করোনাভাইরাসজনিত কিছু লক্ষণ- যেমন নিউমোনিয়া- কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে ওষুধটি। এর বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেও জানান তিনি।

তবে একই গণমাধ্যম জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফ্যাভিপিরাভিরের বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এর পরিবর্তে দেশটির খাদ্য ও নিরাপদ ওষুধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় মার্কিন কোম্পানি জাইলিড সায়েন্স উদ্ভাবিত রেমডেসিভির নামের ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ওষুধটি তৈরি করা হয়েছিল।

তবে জাপানি ওষুধ অ্যাভিগান নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও দেশটি এখনো করোনার চিকিৎসায় এর অনুমোদন দেয়নি। বরং তারা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। কয়েকদিন আগে জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে অন্তত ৩০টি দেশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তাদের সরকারও চিন্তা-ভাবনা করছে, যাতে অনুমতি ছাড়াই কেউ চাইলে ওষুধটি উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারে।

তবে বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা বলছেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে ইভারমেকটিন ওষুধ। যেটা বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান। ওষুধটি সস্তা ও সহজলভ্য বলেও জানান তিনি।

দুই দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ইভারমেকটিন ওষুধ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, প্রচলিত পরজীবী-বিরোধী ওষুধ ইভারমেকটিন প্রয়োগ করে তারা সফলতা পেয়েছেন। এর মাত্র একটি ডোজেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংস হচ্ছে করোনাভাইরাস। তবে সেটা ল্যাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। পর্যাপ্ত অর্থ পেলে তারা এখন একটি সমন্বয় তৈরি করতে চান, যা মানব শরীরে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করে আলোচনায় আসা বিকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, তারা ইতোমধ্যে ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি তৈরি করে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছেন। ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষায় কার্যকারিতা প্রমাণ হলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবেন তারা।

তিনি জানান, মূলত ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার ওষুধটি উদ্ভাবন করেছিল ফুজিফিল্ম। চীন দাবি করেছে, তারা সেটি প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছে। সে কারণেই চীন থেকে এ সংক্রান্ত উপাদান আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, বেক্সিমকো ফার্মার উল্লিখিত কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা ওষুধ পরীক্ষা করছে। আমরা রেমডেসিভির বাদে সবগুলোই তৈরি করে মজুত করছি। যে ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ হবে, সরকার অনুমোদন দিলে আমরা সে ওষুধটিই উৎপাদন করে সরকারকে সরবরাহ করতে পারব।

তিনি জানান, ইভারমেকটিনের কাঁচামালও আনা হচ্ছে এবং এটিও তৈরি করা হবে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আজ রোববারের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে মোট ৮৮ জনকে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছে ৯ জন।

S-.24livenewspaper.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*