শিরোনাম

নীরবে বাড়ছেই করোনা সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের

দুর্বল হয়ে আলোচনার বাইরে চলে যাওয়া কভিড-১৯ ভাইরাস আবারও সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতেই দেশে করোনা রোগী বাড়তে শুরু করছে। বাড়ছে মৃত্যুও। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে টানা ৩৫ দিন ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে শনাক্তের হার। ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশে ৭১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের ১০.১৮ শতাংশ। এ সময়ে মারা গেছেন একজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এর ওপরে উঠলেই সংক্রমণ রোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা ব্যক্তিদের দ্রুত টিকা নেওয়া উচিত।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা এখনো মহামারি পর্যায়ে যায়নি। তবে সংক্রমণ বেড়ে গেছে, মৃত্যু বেড়ে গেছে। আমাদের এখানে বর্ষায় ও গরমে এটা বাড়ে। তাই সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। তখন মৃত্যুও বাড়বে। তবে করোনা মোকাবিলা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে অবশ্যই উদ্বিঘ্ন হতে হবে। হেলাফেলা করলে বিপদ আসতে সময় লাগবে না। স্বাস্থ্যবিধিগুলো আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ টিকা দিয়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া দৈন্দিন করোনা সংক্রমণ বিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- ১০ জানুয়ারি থেকে দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকছে। মাঝে ১৩ ও ১৮ জানুয়ারি ২ দিন ৫ শতাংশের নিচে নামলেও আর কখনো এর নিচে নামেনি। ফেব্রুয়ারির অধিকাংশ দিন শনাক্তের হার ৬ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে থাকছে। জানুয়ারি মাসে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। ফেব্রুয়ারির ২২ দিনেই পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরই মধ্যে দেশে ভাইরাসটির অমিক্রন ধরনের উপধরন জেএন.১ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের কেউই বিদেশ ভ্রমণ করেননি। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ৩ জানুয়ারি কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জানায়, বিশ্বের বেশ কিছু দেশ কভিড-১৯ সংক্রমণ আর এই ভ্যারিয়েন্ট বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধরণকে মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয় কমিটি। বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। কমিটির পরামর্শ আমলে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন জানান, দেশে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছর আড়াই কোটি মানুষকে চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। এ বছর পাবে ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার এই উপধরনকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে কড়া নজরে রেখেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ধরন জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই। যেমন- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, ক্লান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, ডায়রিয়া ও বিভ্রান্ত বোধ।
সূত্র-বিডি প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*