আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি মানা নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সেই সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আচরণবিধি না মানায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
রবিবার এ বিষয়ে ইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।
নোটিশে বলা হয়, ব্যক্তিগতভাবে আজমত উল্লাকে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২৫মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খানের মনোনয়পত্র দাখিলের আগে সভা, মিছিল, শোভাযাত্রা ও শোডাউন নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এর দায়ে তার প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না অথবা তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ৭মে বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।
এছাড়াও, সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোন ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র) হিসেবে যেন দলীয় কার্যক্রম গ্রহণকালে অথবা অন্য কোন কার্যক্রম গ্রহণে আচরণ বিধি মেনে চলেন যেন জন্য পরামর্শ প্রদানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উল্লিখিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেন বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণকালে নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলেন যে জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণসূচি জারি করেন। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার জ্ঞাত হয়ে মন্ত্রীদের একান্ত সচিবদেরকে নির্বাচনী আচরণ বিধির বিষয়টি অবগত করেন। একই সঙ্গে তিনি চিঠিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের একান্ত সচিবদেরকে অবহিত করেন। তবুও মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার জন্য সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২বিধিতে বিধান রয়েছে। তাছাড়া আচরণ বিধিমালার বিধি ৭, বিধি ১৩, বিধি ২০, বিধি ২৫ অনুযায়ী সভা সমিতি অনুষ্ঠান, যানবাহনসহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল, ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার, প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন না করার বিষয়ে বিধান রয়েছে।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সব প্রার্থীকে আচরণবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আইন মেনে চলতে তারা বাধ্য। আমরা কমিশন থেকে যেটা অনুরোধ করেছি সবাই যেন বিধিমালা মেনে চলেন। তারপরও কারও কারও মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, কিছুটা হলেও কৌশল করে না মানার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্লিপ, গণমাধ্যমের সূত্র আমাদের কাছে আসছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে আচরণবিধি না মানার প্রবণতা দেখছি।’
ইসি আজ এ নিয়ে আলোচনায় বসেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা হলো যারা সরকারে থাকেন তারাই আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করে থাকেন, সরকারে যারা থাকেন, তারা আরও দায়িত্বশীল আচরণ করবেন বলে আমরা আশা করি। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারি দলের দায়িত্বও অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে আমরা যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে (মন্ত্রিপরিষদ সচিব) আমরা একটা পত্র দেব, উনি যেন এটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে মাননীয় যারা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য আছেন, তাদের যেন অন্তত অনুরোধ রাখেন যেন এই ধরনের কোনো আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ না হয়।
‘একইভাবে সরকারি দল যেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, এই দলের সাধারণ সম্পাদককেও আমরা চিঠি দিয়ে অনুরোধ করব যে, গাসিক সিটি সংসদ নির্বাচনের প্রারম্ভে হচ্ছে। এই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য তাদের দায়িত্ব আরেকটু বেশি। দলের যারা আছেন তারা যেন আচরণবিধি মেনে চলেন, সে নির্দেশনা দেন।’
গাসিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমার সময় শোডাউন করেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘প্রার্থীকে ইসির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। আজমত উল্লা সাহেবকে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। কমিশনে এসে উনাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। উনি যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেন।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হবে জানিয়ে মো. আলমগীর বলেন, ‘কেননা আমরা যে সমস্ত চিঠি জারি করি বা আইনে কী আছে সেটা হয়তো ওইভাবে সবাই দেখেন না। এই জন্য এটা দেয়া হবে, যেন সবাইকে তিনি অবহিত করেন।’
সূত্র- (ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/কেআর/এসএম)