ঢাকা-টোকিওর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত

ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও।

বৃহস্পতিবার জারি করা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫০ বছর এবং তার পরেও দুই দেশের যাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ হিসাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিশেষ করে এই অঞ্চলে ও এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরো গভীরতর করার এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার সম্প্রসারণ এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন দুই নেতা।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা বর্তমানে সরকারি সফরে টোকিওতে রয়েছেন এবং তিনি ২৬ এপ্রিল জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেন।

উভয় প্রধানমন্ত্রী জাপান মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের (জেএমএসডিএফ) কয়েকটি জাহাজের চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সফর এবং জাপান সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন।

উভয় পক্ষের প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের মধ্যে গঠিত সহযোগিতা ও বিনিময়ের স্মারকটির আলোকে, তারা বিভিন্ন জাহাজ ও বিমানের পারস্পরিক সফর, ইউনিট-টু-ইউনিট বিনিময়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং শুভেচ্ছা অনুশীলনের মতো নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।

এছাড়াও, উভয় প্রধানমন্ত্রী অদূর ভবিষ্যতে তাদেও টোকিওতে দূতাবাসে প্রতিরক্ষা শাখা এবং ঢাকায় দূতাবাসে জাতীয় নিরাপত্তা শাখা খোলার বিষয়টি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী কিশিদা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল, জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল এবং প্রতিরক্ষা বিল্ডআপ প্রোগ্রাম অনুযায়ী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য জাপানের প্রচেষ্টা তুলে ধরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর অধীনে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক করার জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন। উভয় প্রধানমন্ত্রীই নিজ নিজ আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান রাখার জন্য উভয় দেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা জাপান কর্তৃক সরকারী নিরাপত্তা সহায়তা প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বাহিনী এবং সমমনা দেশগুলোর অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সুবিধার জন্য একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামোর কথা উল্লেখ করেন এবং এই কাঠামোর অধীনে ভবিষ্যতে সহযোগিতার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ঐতিহ্যগত এবং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধুত্বের প্রেরণায় পরিচালিত, দুই দেশ ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’র ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

তারা উল্লেখ করেছেন যে, দুই দেশ অভিন্ন মূল্যবোধ ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি ও সংকল্পের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ২০২২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে।

দুই দেশের অভিন্ন মৌলিক মূল্যবোধ এবং নীতিমালায় পরিচালিত, দুই প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে আকার বা ক্ষমতা নির্বিশেষে সকল দেশের অধিকার, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিক আইন, বিধি এবং রীতি নীতি দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।

তারা আরো বলেছেন যে, বিশেষ করে নৌচলাচলের স্বাধীনতার মতো সাধারণ মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে সামুদ্রিক নৌ চলাচল ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য একটি ভিত্তি এবং বৈশ্বিক অভিন্ন ব্যবস্থা হিসাবে সমুদ্রের ব্যবহার নীল অর্থনীতির বিকাশে অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ব্যাখ্যা করেছেন যে, জাপান, জি-৭ এর প্রেসিডেন্সি হিসাবে, আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং জি-৭ এর বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চায়।

শেখ হাসিনা জাপানের জি-৭ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কিশিদা একটি ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি)’ এর জন্য নতুন প্রকাশিত একটি পরিকল্পনার রূপরেখাও দিয়েছেন। যা ‘সমৃদ্ধির জন্য শান্তি ও বিধির নীতিমালা,’ ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা,’ ‘মাল্টি-লেয়ার কানেক্টিভিটি,’ এবং ‘নিরাপত্তার জন্য প্রয়াস সম্প্রসারিত করা ও সমুদ্র’ থেকে “আকাশে” নিরাপদ ব্যবহার করা’র বিষয়ে সহযোগিতার চারটি স্তম্ভের সাথে এফওআইপি দৃষ্টিঅঙ্গিকে আরও উন্নীত করার জন্য জাপানের প্রচেষ্টাকে জোরদার করবে।

সূত্র- (ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/এসএম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*