শিরোনাম

জলবায়ু সাত প্রকল্পের সব কটিতেই অনিয়ম: টিআইবি

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সাতটি প্রকল্পের সব কটিতেই অনিয়ম হয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থের ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ আত্মসাৎ অথবা অপচয় করা হয়েছে।

গতকাল এক র্ভ্চা্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, সাতটি প্রকল্পের জন্য ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা ও আঁতাতের মাধ্যমে আত্মসাৎ বা অপচয় করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের আওতায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার সুযোগ না থাকায় অবমুক্তকরণের নামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের অপচয় করা হচ্ছে। সড়কবাতি-সংক্রান্ত দুটি প্রকল্পের প্রস্তাব অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথভাবে যাচাই না করেই অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলনসহ অনুমোদন দেওয়া হয়।

একই সময়ে একই ধরনের সক্ষমতার দুটি প্রকল্পের আওতায় উত্থাপিত সড়কবাতির ইউনিটপ্রতি মূল্যের পার্থক্য প্রায় ১ লাখ ১ হাজার টাকা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়, যে প্রকল্পে সড়কবাতির ইউনিট মূল্য সবচেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রায় অর্ধেক সড়কবাতি অকার্যকর হয়ে গেছে।

ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এম জাকির হোসেন খান জানান, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

প্রকল্প অনুযায়ী অর্থ আত্মসাৎ বা অপচয়ের পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে প্রতিবেদনে প্রকল্পগুলো ও এলাকার নাম উল্লেখ না করে সংখ্যা দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকল্প-১ বনায়নের জন্য বরাদ্দকৃত ৩.২৮ কোটি টাকার ৪০ শতাংশ বা তহবিলের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।

প্রকল্প-২ বাস্তবায়নে প্রায় ১ লাখ চারাগাছ কম লাগানো এবং প্রকল্পের আওতায় কেনা যানবাহন ও অফিস সরঞ্জাম প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৫৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

প্রকল্প-৩ বাস্তবায়নে নিম্নমানের চারা রোপণসহ প্রকল্পের উল্লিখিত কার্যক্রমের আংশিক বাস্তবায়ন ও ব্যয় দেখিয়ে বরাদ্দ তহবিলের অংশবিশেষ ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

প্রকল্প-৪ বাস্তবায়নে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে বাকি অর্ধেকের মতো তহবিল ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

প্রকল্প-৫ বাস্তবায়নে ২৮ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলনের মাধ্যমে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

প্রকল্প-৬ বাস্তবায়নে একর প্রতি ১১ লাখ টাকা অতিরিক্ত দামে ৪ একর জমি কেনাসহ অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ২৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

প্রকল্প-৭ বাস্তবায়নে ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলনের মাধ্যমে অপচয় করা হয় ৬৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় উৎস থেকে ২০২০ সাল নাগাদ যথাক্রমে ৬০৮.৬২ কোটি এবং ১২,০৯১.০৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের (বিসিসিটিএফ) মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে অর্থায়ন করা হয়েছে। আর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ), স্পেসিফিক ইনভেস্টমেন্ট লোন (এসআইএল), ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (সিআইএফ), গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ), বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ডের (বিসিসিআরএফ) মাধ্যমে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে প্রশমন কার্যক্রমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়।

প্রশমন কার্যক্রমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়নের অনুপাত ৫:৯৫। বাংলাদেশে প্রশমন অর্থায়নের সিংহভাগ আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হলেও এই আন্তর্জাতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থায়নের মাত্র ৬৭ শতাংশ অর্থ শুধু প্রশমন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়েছে।

টিআইবি জানায়, সাতটি প্রকল্পের প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফলে উল্লেখের বাইরে যদি প্রকল্পে প্রস্তাবিত কার্যক্রমের কথা বিবেচনা করা হয়, তবে দেখা যায় সাতটি প্রকল্পের মধ্যে চারটির ক্ষেত্রে বনায়ন, তিনটি নবায়নযোগ্য জ্বালানিসংক্রান্ত কার্যক্রম করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্প প্রস্তাববের সঙ্গে বাস্তবায়নের সামঞ্জস্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, একটি প্রকল্প ছাড়া বাকি ছয়টি প্রকল্পেই প্রস্তাবের সঙ্গে বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরন ও মাত্রার অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

সূত্র- (ঢাকাটাইমস/৫নভেম্বর)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*