শিরোনাম
ফাইল ছবি

সোহরাওয়ার্দীতে দুপুরে আ’লীগের মহাসমাবেশ

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ আজ শনিবার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় বিজয় উদ্যাপন করতেই এ আয়োজন।

দুপুর আড়াইটায় মহাসমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন- বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের জন্য দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাবেন তিনি।

সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সমাবেশে নেতাকর্মীদের ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে সতর্ক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের দূরে থাকতে আহ্বান জানাবেন দলের সভাপতি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ২১০০ সালের উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে টানা তৃতীয়বারের মতো বড় জয়ের পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি, তাই একে জনসমুদ্রে রূপ দিতে চায় দলটি। গতানুগতিক সমাবেশের বাইরে উৎসবের আবহে উদ্যাপন করতে চায় এ ‘বিজয় উৎসব’। ইতিমধ্যে এটাকে স্মরণীয় করে রাখতে সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে তারা।

শুক্রবার সকালে সমাবেশস্থল ঘুরে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠের ভেতরের পুকুরের পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। যার সামনের অংশ দলীয় প্রতীক নৌকা আকৃতির। মঞ্চের ওপরে লেখা ‘সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা’। দক্ষিণমুখী মঞ্চের সামনের মাঠে তৈরি করে রাখা হয়েছে ছোট ছোট নৌকা। নৌকার পালের ওপরে কোনোটায় লেখা ‘জয় বাংলা’ আবার কোনোটায় লেখা ‘বাংলার জয়’।

এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের তথ্যসংবলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার লাগানো হয়েছে।

মহাসমাবেশস্থলে আজ বেলা ১১টা থেকে প্রবেশ করা যাবে। এবারের মহাসমাবেশে সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য গেটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা গেটের ব্যবস্থা। এ ছাড়া অন্যান্যবারের তুলনায় এবার টয়লেটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পুরো মাঠ পরিষ্কার করা হয়েছে।

মহাসমাবেশের মঞ্চে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশবরেণ্য শিল্পীরা নাচ-গানের মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে রাখবেন সমাবেশস্থল। বিজয় সমাবেশকে বিজয় আনন্দে রূপ দিতে বরণ্যে শিল্পীরা বিভিন্ন গান পরিবেশন করবেন।

এ লক্ষ্যে মূল বিজয় মঞ্চের সামনে পৃথকভাবে আরেকটি মঞ্চ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ড একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারের মলাটের রঙের আদলে সজ্জিত করা হয়েছে।

দুপুর আড়াইটার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে আসবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমনের সময় শিল্পী মমতাজ গান পরিবেশন করবেন এবং মঞ্চে আসন গ্রহণের পর ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করবেন।

গান পরিবেশন করবেন আঁখি আলমগীর, রফিকুল আলম, ফাহমিদা নবী, কল্পনা মজুমদার ও জলের গান-এর দল। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবেদন করে ‘আপনার জন্ম একটি নতুন সময়ের ইঙ্গিত’ কবিতা আবৃত্তি করবেন কবি রাসেল আশেকী। এরপর দলের নেতারা বক্তব্য দেবেন।

মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ ছাড়াও মহাজোটের শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সব শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতি থাকবে। রাজধানী ছাড়াও এর পাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে মহাসমাবেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।

বাস, ট্রাক ও রেলপথে নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসে বর্ণিল মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে সমবেত হবেন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের দলীয় এমপিরা মিছিলসহকারে মহাসমাবেশে যোগ দেবেন।

৫২ হাজার লাল-সবুজের পতাকা ওড়াবে যুবলীগ : বিজয় উৎসবে ভিন্নমাত্রা দিতে লাল-সবুজের পতাকা ও লাল ফিতা হাতে নিয়ে মাঠে থাকবে যুবলীগের ৫২ হাজার নেতাকর্মী। সব পস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

তিনি জানান, প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে ৭০০ নেতাকর্মী লাল-সবুজের গেঞ্জি পরে মিছিল নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হবেন। তাদের হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং লাল ফিতা থাকবে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যখন বক্তৃতা করবেন পতাকা নেড়ে তাকে স্বাগত জানানো হবে।

সমাবেশে আসবেন যেভাবে : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচলে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সমাবেশে রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর রোড হয়ে আসা নেতাকর্মীরা সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট হয়ে নীলক্ষেতে নেমে হেঁটে টিএসসি হয়ে বিভিন্ন গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করবেন।

আগতদের বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর ও নীলক্ষেত থেকে পলাশী পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে এক লাইনে পার্কিং করা যাবে। উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট রোড হয়ে মহাখালী-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমনি ক্রসিং-নাইটিঙ্গেল-পল্টন মোড়-জিরো পয়েন্ট অথবা খিলক্ষেত ফ্লাইওভার-বাড্ডা-গুলশান-রামপুরা রোড-মৌচাক ফ্লাইওভার-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজমনি ক্রসিং-নাইটিঙ্গেল হয়ে পল্টন মোড়/ জিরো পয়েন্ট হয়ে আগত ব্যক্তিরা পল্টন মোড়ে নেমে হেঁটে দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং তাদের বাসসমূহ মতিঝিল এলাকায় পার্কিং করবেন।

উত্তরা থেকে আসা গাড়িসমূহের পার্কিং স্থান মতিঝিল, গুলিস্তানে সংকুলান না হলে প্রয়োজনে হাতিরঝিল এলাকায় পার্কিং করা যাবে।

পূর্বাঞ্চল থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে পোস্তগোলা হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আগত ব্যক্তিবর্গ গুলিস্তানে নেমে হেঁটে জিরো পয়েন্ট-দোয়েল চত্বর হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে গমন করতে বলা হয়েছে এবং তাদের বাসসমূহ মতিঝিল/গুলিস্তান এলাকায় পার্কিং করা যাবে।

এ ছাড়া যারা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে চাঁনখারপুল হয়ে গমন করবেন তারা চাঁনখারপুল নেমে হেঁটে দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং তাদের বাসসমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে পার্কিং করা যাবে।

বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে আগতরা গোলাপশাহ মাজারে নেমে হেঁটে হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করবেন এবং তাদের বাস গুলিস্তান এলাকায় পার্কিং করবেন।

বিশেষ নির্দেশনা : শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির যাতায়াত উপলক্ষে ওইদিন ভোর থেকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশের বিভিন্ন ইন্টারসেকশন যেমন-বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ, কাটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশীবাজার, চাঁনখারপুল, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টু রোড ক্রসিংগুলো থেকে গাড়ি ডাইভারশন দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।

অনুষ্ঠানস্থলে আগত ব্যক্তিদের কোনো প্রকার হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, দাহ্য পদার্থ বা ধারালো কোনো বস্তু বহন না করাসহ কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র-যুগান্তর।১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*